বাক্সবদল- ৭







নির্বাচিত দুই কবি, একটি জুটি। বেছে নিলেন প্রিয় বা পছন্দের তিনটি কবিতা। বদলে দেওয়া হল বাক্স।
একে অন্যের প্রিয় বা পছন্দের তিন কবিতার বিনির্মাণ / পুনর্নির্মাণ করলেন। আবার বাক্সবদল।
নিজের প্রিয় বা পছন্দের তিন কবিতার বিনির্মাণ / পুনর্নির্মাণের আলোচনা করলেন এক কবি।
বিনির্মাণ ও অন্য বিনির্মিত কবিতাগুলির আলোচনায় আমাদের সহায়তা করলেন- কবি তন্ময় কুমার মণ্ডল।

অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রিয়/পছন্দের তিনটি কবিতা

অ্যাশট্রে ।। বারীন ঘোষাল

সকালের গড়িয়ে পড়া অ্যাশট্রে বিকেলে এসে স্থির হল
বেরিয়ে ফিরে আসার পৃথিবী এতটা দূরে
আর কাছের সংসারে খুব ছাই জমে
কাচের সংসারে এক অভঙ্গুর কাচ হয়ে সেজে থাকে
স্ট্রেচার টেবিলে ফ্রিজে
বিস্তোরা খাবার জায়গা কমোডের ধারে
অপরিচিতের মতো ঠেলা খেয়ে ফিরে যায় সকালে আবার
ছাই জমে
খুব ছাই জমে
ছড়িয়ে প'ড়ে নোংরা বিরক্ত হয় সংসারে

আমার বাড়িতে এই দেখা যাবে যে কোন জায়গায়
এখনো সাজানো অ্যাশট্রে রাখা আছে
ব্যবহৃত হবে বলে
ব্যবহৃত, আমার গৃহিণী
নিজেও সে সাজতে ভালোবাসে
হাসপাতালের থেকে ফিরে রোজ ছাই খোঁজে
ভরে উঠবার কাছে ভেঙে যায়
প্রতিবার অ্যাশট্রে সংক্রান্ত কিছু শিখে এসে
নিজেকে সাজায়


অন্ধকারের কিছু কথা ।। অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

আলো জ্বাললেই
সবটা ঘর হয়ে ওঠে না
কিছু পুরোনো তার সামান্য দমকা ছড়ায়

তুমি অন্ধকারকে লিখতে চাও নি
মাঝের নাব্যতায়
গন্ধের আগে ও
পরে

উবু উবু নখের চিহ্ন বিরতি
নোয়ানো জলে
                 একলা সহবাসে

এইসব আমার
আদপে হুইলচেয়ার
বসলেই বাজতে থাকে

একটা ফাতনা কত যত্নে বানাতে পারতাম
                ছিপের প্রেমে পড়ে

কত রাত জেগেছি     একটু বৃষ্টির জন্য
এইসব মাছের জন্য


রঙরাগ ।। উমাপদ কর

মুখে পলাশের ছোপ
মাথার চুলে চুল পলাশে পলাশ
বুকে পেটে নাভিতে
ইটরঙা পলাশ আদুরে গুলমোহর
লেখা ফাল্গুন, বসন্তে উদ্ভেদ
লালহাসি তবু লো বসন্ত কুহু

ট্রেনের জানলার ফ্রেমে চৈত্র পলাশপেখম
দুপাশের অসহ্য রঙের ভেতর দিয়ে খরস্রোতা
হাই-ওয়ের নামা-ওঠায় দুপুর ফাটানো রঙ
কোথায় ভাসাবে অজানা
পাতা নেই শুধু ডালকঙ্কালে রঙীন ফুটে উজার
আমার তাকানোকেও বড় জোলো মনে হয়

মাইল মাইল গতির ভেতর নির্লজ্জ
মাটি মোরাম পাথর ঢালে সমতলে সমান ফাটাফাটি
আমাকে বেহুঁশ করুক রঙের ছড়রা
সামনে পেছনে কিছুই আর দেখতে চাই না
নীচে ওপরে সব পানসে মনে হতে পারে

শুধু দুপাশে চোখ      রঙদ্রোহ ভেসে যায়  

           এস্পার-ওস্পার

বিনির্মাণ করলেন তন্ময় কুমার মণ্ডল

বিনির্মাণ-১ ।। তন্ময় কুমার মণ্ডল

বহু নিচে আদরের আঘাত ফুলে আছে
যেন গোছানো বালি
জলের সেসব অগভীর গান সূচের মতো
যার ভেতর ডুব
আর মৃতদেহ শুয়ে থাকবে বলে অগাধ হাসি
রক্তাক্ত সেসব হাসির ভেতর - আমি, আমি..


সূত্র: এশট্রে ।। বারীন ঘোষাল


বিনির্মাণ-২ ।। তন্ময় কুমার মণ্ডল

উঠোন বরাবর উঠোনের মায়া
কার্যত খিল-বন্ধ অদূরের দরজা
সমস্ত দৃশ্য দ্রভীভূত হয়
শব্দ নয় অথচ শব্দের ছায়া
অনবরত আমাকে ফিরে যাওয়ার ব্যায়াম শেখায়

সূত্র: অন্ধকারের কিছু কথা ।। অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়


বিনির্মাণ-৩।। তন্ময় কুমার মণ্ডল

ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া সব নৌকোই পালতোলা
ভেসে যাওয়া নয় বরং উড়ে যাওয়াও
তির-তির কাঁপছে ছায়া
নরম রাস্তা
আর তার ঢেউ
ছড়িয়ে রাখছে আমাকেও

সূত্র: রঙরাগ ।। উমাপদ কর


বিনির্মাণ প্রসঙ্গে
অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

       নির্মিত ও বিনির্মিত কবিতা তিনটি পাশাপাশি রয়েছে। দুই কবির কবিতা নির্মাণ নিয়ে আমার পাঠানুসারে কিছু কথা এখানে তুলে ধরছি।

অ্যাশট্রে / বারীন ঘোষাল

       এই কবিতায় বারীন তাঁর নিজের কথাই হয়তো বলেছেন কিন্তু সেই বলাটা আমার মতে একরৈখিক নয়, কারণ এখানে কবিতা পর্বের অধিকার আছে। আছে দৃশ্যকে ভেঙে বেরোনোর এক ভিন্নতর প্রয়াস।

       শিরোনাম থেকেই মূলত কবিতাটা শুরু। আর শেষটা মিশে গেছে সেই শিরোনামে।

       বিনির্মাণ এখানে ঠিক যেভাবে জরুরি তার সমস্তটাই তন্ময়ের লেখায় প্রকাশ পেলেওমতোবলে যে উচ্চারণ, তাতে আমার সহমত নেই, বরং আপত্তি থেকে গেল। থেকে গেল শেষ লাইনটাতেও, কারণ এখানে বড্ড একঘেয়ে এক শব্দের ব্যবহার, যা  সেই চিরাচরিত এক চিত্রকল্প তুলে ধরে।

       তবে কবিতার সংহতি আমাকে অপার আনন্দ দিয়েছে। এই ভাবনায় আমি কবি তন্ময় মন্ডল কে আমার ভাল লাগা আর ভালবাসাই জানাবো।

অন্ধকারের কিছু কথা / অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

       এই কবিতার বিনির্মাণের ক্ষেত্রে এত ভাল একটা লাইন দিয়ে শুরু করে তন্ময় কবিতাটাকে শেষ পর্যন্ত নিজের দেখা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলো না। পারলো না কবির স্মৃতিকে নিজের চোখ দিয়ে উস্কে দিতে। দরজা তাই আটকেই গেল। শব্দেরা বসে থাকলো শব্দ নিয়ে।

       ফিরে যাওয়ায় ব্যায়াম শেখার কিছু থাকে না। ফিরে যাওয়াটা অনুভব। আর এটা এই কবিতা বা যেকোন কবিতারই বেঁচে থাকার রসদ। একটু বৃষ্টি আর মাছ যে কত জরুরি হয় জীবনের জন্য । আর এটুকুই কবির অহংকার থাকে। একলা থাকে।

রঙরাগ / উমাপদ কর

       এই কবিতাটি কবির নিজস্ব চলন আর বেঁচে থাকার যে সব আঁকিবুকি তাদের পলকহীন চোখের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায় কিভাবে কবি বারবার রং এর আশ্রয় নিতে চাইছেন স্মৃতিকে শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরে। কিভাবে কবি আবার নিজের সেই কাঙ্খিত জীবনে প্রবেশ করতে চাইছেন মুক্তির শব্দ দিয়ে গন্ধ দিয়ে।

       এই দিকগুলি বিবেচনা করলে এই কবিতায় কবি তন্ময় মণ্ডলের বিনির্মাণের এই সংহত ভেসে যাওয়া বেশ সফল আর আন্তরিক। শুধু আমার পর পর দুই লাইনে যাওয়া শব্দের ব্যবহার তেমন ভাল লাগছে না। বাকিটা আমার নিজের কাছাকাছি। মনের কাছাকাছি।

       সব মিলিয়ে কবি তন্ময় মণ্ডলের এই বিনির্মাণকে বা বিনির্মাণের এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে আমার সাধুবাদ জানাই। ওর জন্য আর এই কবিতাগুলির জন্য আমার অনেক অনেক ভালবাসা রইল।

       রেহেল কে ধন্যবাদ এই রকম এক সুন্দর চিন্তা আর তার প্রকাশে আমাদেরকে সামিল করার জন্য। ।


মাসুদার রহমান-এর প্রিয়/পছন্দের তিনটি কবিতা

মহেশ  ।।  আহমেদ মুজিব

আহা, মহেশের চামড়ার উপড়ে কি চিরস্থায়ী আঁধার!
পশ্চাদপদের ভিতর থেকে বেরুনো যে-লেজ সে-ও তৈরি লম্বা অন্ধকারে।
রাতের আকাশে দুটি তারা যেন মহেশের দুটি খোলা চোখ,
হঠাৎ উড়ে গেল তাকে ফেলে,
গাবতলী থেকে আসা বিশ্বরোডে
একটি ট্রাকের দুটি হেডলাইট জ্বলজ্বল করে,
মনে হয় ঐ মহেশের হারানো দুটি চোখ,
দুফোটা জল চোখ মেলে তাকিয়েছে বিশাল আকাশে।


আগুন-আগুন ।। ময়ূখ চৌধুরী

তোমাকে দেখবো বলে একবার কী কাণ্ডটাই না করেছিলাম
আগুন আগুনবলে চিৎকার করে
সমস্ত পাড়াটাকে চমকে দিয়ে
তোলপাড় করে
সুখের গেরস্থালিতে ডুবে-যাওয়া লোকজনদের
বড়শি-গাঁথা মাছের মতো
বাইরে টেনে নিয়ে এলাম
তুমিও এসে দাঁড়ালে রেলিঙে
কোথায় আগুন?
আমাকে পাগল ভেবে যে-যার নিজের ঘরে ফিরে গেলো।
একমাত্র তুমিই দেখতে পেলে
তোমার শিক্ষিত চোখে
আমার বুকের পাড়ায় কী-জবর লেগেছে আগুন।
(১৮/১২/১৯৭৫)


নিঃসঙ্গতা ।। আবুল হাসান

অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,

আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!


বিনির্মাণ করলেন অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

বিনির্মাণ-১ ।। অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

আমাদের শিকারের দিনগুলি ছিল চামড়ায় মোড়া
আকাশ ছেড়ে নেমে এসেছিল কালো চশমারাও

এইপার থেকে তুমি
তাকাতেই দৃশ্য সব মধুমাস
পবন পবন

ইশারা তো তবুও ছিল
আস্তিনের আনাচে কানাচে
হাঁটতে হাঁটতে

দুফোঁটা মেঘ এসে বলে গেল
বৃষ্টির মাস এখন শেষ
এইবার শুধু রোদে মেলে দেওয়া

সূত্র: মহেশ  ।।  আহমেদ মুজিব


বিনির্মাণ-২ ।। অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

আগুন আবার ঈশ্বর হোক

গেরস্থালি পুড়ে যাক বুকের চারপাশে
চোখের পাড়া সামলাতে

বড়শির মাথায় উঠে নাচুক জঙ্গল
তোমার চুলের গন্ধরাও

আগুন আবার
আমার পরবর্তী তোলপাড় হয়ে উঠুক

সূত্র: আগুন-আগুন ।। ময়ূখ চৌধুরী


বিনির্মাণ-৩ ।। অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়ের কোল ছেড়ে উড়ে যাচ্ছে
অভিমান
একটা দুপুর লিখবো যখন

কোনো মেয়ে এসে স্বাধীনতা হবে
পতাকা বিছিয়ে দেবে বুকের ওপর

সূত্র: নিঃসঙ্গতা ।। আবুল হাসান


বিনির্মাণ প্রসঙ্গে
তন্ময় কুমার মণ্ডল

       একটি বাড়ির ছায়া দিয়ে তৈরি আরেকটি বাড়ি... তাদের ভেতর আমাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে এই ইট কাঠ পাথর, এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো অথবা মান অভিমান। একে জেলখানা বলতে পারো অথবা পাগলা গারদও। আমি বানানো গোয়েন্দা, জুড়ে জুড়ে তৈরি করার কী বুঝি, অর্থ-কাম-লাভ-লোকসানের পাল্লায় আমিও অন্তিম অব্দি, মাঝে মাঝে গঙ্গাজল, তিলক কচ্চিৎ... ইন্দ্রিয়াতীতের দেখা পাওয়ার ভান, তার ছায়া দিয়ে তৈরি করা বাড়ি আতস কাচে আর কাচে আবছা ও স্পষ্ট করি, ভাবি এই তো হল ছবি  - খুঁতের 'নি'তে টিং টিং করে বাজে...

       আলো এসে পড়ে, কখনও কখনও ঝলসায়ও, বা অন্য আলো লিখি, ভাবি এই পৃথিবী গোলাকারই বটে, অসীমকে সসীম বানিয়েছি - আসলে আমাদের ফানেল গুলোর অন্তর্মুখ ক্রমশ সরু - অতএব অন্য  র‍্যাডার দরকার। গোলাকার পৃথিবীকে চ্যাপ্টা অথবা প্রিজম বানানোর জন্য।

       অন্য পৃথিবী অন্য আলোর ছায়া দিয়ে বানানো ঘর; তার ভেতরে বন্ধুত্ব ও ক্রোধ নিয়ে দাঁড়িয় ইঁটের সংখ্যা গুনি, পলেস্তরার উঁচু নীচু দেখি। চেঁচাই - আর আমার অপ্রাসঙ্গিক পাগলামিগুলো ফেলে রাখি আলো ও ছায়ার প্রতিবিম্ব রূপে।

মহেশ ও মহেশের ছায়ার ছায়া

       লম্বা অন্ধকারে কে দাঁড়িয়ে থাকে? আমাদের চামড়ায় মোড়া আমাদেরই কালো চশমা অথবা হারানো দু ফোঁটা জলের দিকে রোদে মেলে দেওয়া চোখ। ঢুকে যাবে চিরস্থায়ী লেজে,ট্রাকের ট্র‍্যাকে শিকারীর অপেক্ষাও শান্ত; রোদের পর সেই প্রাচীরের দিকেই যাত্রা করি, আমরা ভাবি বুঝি এই আয়োজন  আমাদেরই চতুর্পাশে আমাদেরই কেন্দ্রে রেখে ভ্রাম্যমান। আসলে জানিনা নির্মোহ এই পরিভ্রমন আর গাছের পুড়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট যা কিছু তার ছাই নিয়ে খেলা করি।

       আকাশে দু'ফোটা মেঘ আর বৃষ্টির  মধুমাস, আর হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে যে হেডলাইট সেই-ই জ্বলজ্বল করে, জল-জল ক'রে উড়ে যাই - এই পৃথিবী, এর নির্মান ও বিনির্মানের কাছে নতজানু এবং ভালোবাসা এবং হিংসা ও ঘৃণা, দ্বিধা ও ফুঁ নিয়ে আকারের ফুল ও গন্ধে ম ম আমার চ্যাপ্টা বা শঙ্কু পৃথিবী ভ'রে যায় একাকীত্ব ও আলো নিয়ে।

       এর ভেতর একটি লুকোনো দরজা আছে। এই মহেশ ও ওই ছায়ার ভেতর অথবা অন্যসব ভেতরের শেকল শিকড়হীন। ভেঙে পড়া নির্মানের উপর আরও ভেঙে পড়া - এই অস্তিত্বহীনতার দিকে বাড়িয়ে দেওয়া হাত - অন্ধকারে আনত দৃশ্যের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিই আতস কাচের অহংকার।

গুনে, আগুনে আনচান

       ঢুকে যাই আরও ভেতরে, যেন খেলোয়াড় আমি, কোনও সাপুড়ে যেভাবে বের করে আনে, খেলায়... বিষ মুখে নিয়ে তোলপাড় হিস হিস সব... যেন জলেরই কোনও ইশারায় নাচি।

       বাঁক পেরিয়ে তারপর সেই পথের ছবি নিয়ে ভাবি কোথাও কেউ কি এঁকেছিল পদ্মের বীজ! কী জানি   কী ছিল বাঁশির ফোয়ারা কিংবা চাঁদের ডুব উপেক্ষা করা ছিল অজুহাত মাত্র, ঢেউয়ের গতিপথ দিয়ে চোখ চলে যায় বহুদূর, গভীরে কারও চোখ আর গোয়ান্দাগিরির ছটফটানি।

       উফ ভীষন এক আগুনের ভেতর গন্ধে গন্ধে উড়ে যাচ্ছে ব্যস্ততা, রেলিং এর পাড়াও ঝুঁকে দেখছে কে এক হুইশেল বাজিয়ে ফেরা   ম্যাজিশিয়ান হাঁ করে পাগলের অভিনয় করছে। এও কী সেই সিনেমার হিরো যার চোখ ট্যারা অথবা নদীর পাশে বয়ে যেতে হয়। জঙ্গলে জঙ্গলে ময়ূরের পেখম আর রং দেখে বঁড়শি কথা মনে পড়ে, গিললেই হল! তারপর সামলাও, সব তোমার সাথেই তার দিকে তীর তাক করে হি হি করে হাসবে।

জ্যামিতিক সীমারেখা 

       কাকে ভাঙব এবং কীভাবে? জিজ্ঞাসা চিহ্নটিও বেঁকে বসছে। দ্বিধা ও দ্বন্দ্বের এই জগৎ তার নামহীনতা পেরিয়ে যেতে পারে না। পুকুরপাড়ের বৃদ্ধ গাছ উজাড়, বহু শেকড়ের অট্টালিকা সেও চায়... হোক না স্থবির - ধ্যানের মহিমা তবুও বারবার ঘণ্টাধ্বনি বাজে তার কানে।

       আমি ঢেউ ভেঙে উঠি। পুবদিক বুঝিনা, কেবল রূপসাগরের ঢিল যতদূর তরঙ্গ যায়, অনাবৃত আকাশের ছায়া দেখি আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উড়ে যাই অন্য আমার কাছে। কী বা চাওয়ার আছে এই মেঘ, জল আর উপলব্ধ মনের কাছে! বৃত্ত ছেড়ে যাচ্ছে বৃত্তের মহিমা - সেই ছায়াছবি ভাসে অতলান্ত হইরই, ভীড় সমাগম আর তৃষ্ণা ফুঁড়ে মায়ের কোল থেকে উঠে আসে আয়নার দাঁড় - যেন আদিগন্ত আকশের কাছে তার প্রতিবিম্ব পড়ে আছে। সেও যেন পেতে চায়  টপকে যাওয়ার অনন্য অনুভব।






আপনার মূল্যবান মতামত: