নির্বাচিত দুই কবি, একটি জুটি। বেছে নিলেন প্রিয় বা পছন্দের তিনটি কবিতা। বদলে দেওয়া হল বাক্স।
একে অন্যের প্রিয় বা পছন্দের তিন কবিতার বিনির্মাণ / পুনর্নির্মাণ করলেন। আবার বাক্সবদল।
নিজের প্রিয় বা পছন্দের তিন কবিতার বিনির্মাণ / পুনর্নির্মাণের আলোচনা করলেন এক কবি।
অন্য বিনির্মিত কবিতাগুলির আলোচনায় আমাদের সহায়তা করলেন- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি।
অন্য বিনির্মিত কবিতাগুলির আলোচনায় আমাদের সহায়তা করলেন- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কবি।
ধীমান চক্রবর্তী-র প্রিয়/পছন্দের তিনটি
কবিতা
মৃত্যু স্বরলিপি ।। বারীন ঘোষাল
ঘুম থেকে উঠে দেখি সবুজ গেলাসে
পলাশের মদ
কাচের সিম্ফনী ভেঙে যাবার
টুটা ফুটা ক্ষেতে গোটানো মশারি অবদি চরাচর
কংক্রিট কুঁচকে ওঠার গান কারখানা হুটার
নায়িকাহীন কবিতায় একজন নায়িকার ফোলা মোম
এবার গলে পড়বে পলাশের মদে
বুকের বোতাম বুকের পাশবোতামের রং
লক্ষ্য করার সাক্ষী আনি ট্যুরিস্ট-এর
রোদগুলি নীরব সিম্ফনী যদি সে বলতে পারে আমাদের
কাগজে ফিচার লিখতে পারে কি ভাবে ফুটেছিল
মৃত্যু স্বরলিপি
অধুনান্তিক ।। মঞ্জুষ
দাশগুপ্ত
মার্বেল পেপারে রাততারা। কার জন্মদিন।
উদাসীন হাওয়াব্যালেরিনা দিগন্তরেখায়। চলে যায় কেউ।
প্রতিটি ভাষাতে এত ভেদচিহ্নঢেউ। সমুদ্র জানে না
কতকাল হিমবাহ অনুবাদহীন। হাসিবিবাহের দেশে
বিরহবৃষ্টির শুরু কখন যে হয়! দাবানল
সেগুনমঞ্জরী খেয়ে ফেলে। শালসবুজের ওড়না
সিঁদুররক্তের স্মৃতি সুতোয় জড়ায়। ব্রহ্মপাথরের গায়ে
তবু কোনও শ্যাওলা জমে না। নির্বিকার অর্ধনারীশ্বর
কুমারসম্ভব স্বপ্নে কবির শরীরে এসে বসে। মুদ্রাদোষে
মরুভূমি অর্কিডশিকড়ে প্রতারণা লেখে।
কেন্দ্র নেই। যে কোনো দিকেই আজ পাঠবস্তু চলে যেতে পারে...
চোখ ।। শামশের আনোয়ার
আমি জারিনার চোখের সাপদুটোকে ভালবাসি
নাজনীনের চোখেরও
ওরা দুজনেই আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে সাপ দুটো
যখন বৃষ্টি হয় খুব জারিনা ঘুমিয়ে পড়ে
বৃষ্টি ওর লাশ থেকে নিঃশব্দে উঠে যায়
জারিনা কি টের পায়
পেতেও পারে
সাপেরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বোঝে
নাজনীনের পাশ থেকে বৃষ্টি উঠে গেলে
নাজনীনও বোঝে
আমি নাজনীন ও জারিনার চোখে দু জোড়া
সাপকে বৃষ্টিতে ধোওয়াই, ভালবাসি
খেলা করি
বিনির্মাণ করলেন রমিত দে
বিনির্মাণ-১ ।। রমিত দে
মেদহীন
ঘুমের শেষে
বিষয়
হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মদ।
মিথটির
দ্বার খোলা থাকে
আর
সূর্যাস্ত পেরিয়ে কাঁচ উড়ে যায় কেয়ারির করুণা পথে।
একটা
মাঠ
একটা
মশারি
এটাও
তো বলে দিতে হয়
গোটানো
ছাড়া স্থিতপক্ষ গড়ে তোলা যায়নি কোথাও।
নামমাত্র
ওই নায়িকা
চলো
ঘুরি ওই কবিতায়
ভিজে
ভিজে ফিরে আসি একা, নিরাকারে।
কোথাও
আছে নাকি বাড়ি, বুকের বোতাম, বুড়ো
আকাশ!
বলতে
না বলতেই রোদ হাত ধরেছে রক্তমাংসের
আর
দুদিন ধরে মৃত্যু খোলা মানুষের টেবিলে।
সূত্র: মৃত্যু স্বরলিপি
।। বারীন ঘোষাল
বিনির্মাণ-২ ।। রমিত দে
ভাবো, না ভেবেই
ভাবো, এতগুলি
ফেরার
মাঝে তবে আসা কোনটা!
নীল
কাগজে মোড়া জন্মদিনে
উত্তর
দিকের জানলা খোলা।
তবে
কি দু এক টুকরো মাধ্যাকর্ষণ ভাঙা মাঠের দিকে!
যেন
বিরহ বিবাহের মতো টাটকা।
যেন
সমুদ্র হাসছে,তবু তো হিমবাহের
হিম
গলছে না।
প্রশ্নটা
ছিল স্মৃতির
অথচ
পাথরের ওপর শ্যাওলার ওই স্বপ্ন উড়ে যায়।
ভাবা
যাক সবুজ সাজে আগুন।
সাজের
শেষে অনুল্লেখ তার এই সাজ।
ভাবা
যাক পৌঁছোনোর দিনেও
প্রতারণার
আরও দরজা খোলা আছে।
সর্তকের
মাঝে তবে কি আরও এক সহজের কাছাকাছি কবি!
বোঝাই
যাচ্ছে, কেন্দ্র, সে এক কুড়োনোর খেলা
আর
পাঠ, পায়ের তলার মাটি নিয়ে সে ভাবছেনা।
চমৎকার
এক পলাতক,পাতা উড়ে যাওয়ার
দিকে
মেলে রাখা...
সূত্র: অধুনান্তিক
।। মঞ্জুষ দাশগুপ্ত
বিনির্মাণ-৩ ।। রমিত দে
চোখ
খুঁজতে গিয়ে সাপগুলোই
সারাৎসার।
সাপগুলোও
কি বোঝে
চোখের
জন্য এ লেখা লিখছি না!
জারিনা
নাজনীন
ওদের
চোখের সামনে আমি বসে থাকি।
যেভাবে
ঘুমের ভেতর ওরা বসে বৃষ্টিকে বিদ্রুপ করে।
আমি
চোখকে অনুরোধ করিনা
আমি
বৃষ্টিকে অনুরোধ করিনা
আমি
সাপগুলোকে অনুরোধ করি
বৃষ্টি
হয়ে গেলে
ওড়া
বালি আর বুদবুদ খুঁজি কোনো এক বিষের বনে...
সূত্র: চোখ ।। শামশের আনোয়ার
ধীমান চক্রবর্তী
রাত্রিবেলা দু'টি অন্ধ সাপ। লাবণ্য তার চোখ খুঁজতে চেয়ে হলুদ পাতা সরিয়ে বাঁশিকে গান শোনায়। কিছু না লিখলেও জারিনা বা নাজনীন নিজের আলোয় জেগে ওঠে। জেগে ওঠে বৃষ্টি বা অন্ধকারেও। ঘুমের দেওয়াল ভেঙে ফেলে সূর্যাস্তের ভাঙা টুকরোগুলো নিয়ে তুলে ধরো ভেজা চিবুক। শুধু বৃষ্টির কাছে গিয়েছিলে, পরমেশ্বরী কিংবা একটি বালিঘড়ি কি বলতে চেয়েছিল তা জানতেও পারলে না। তাইতো তোমাকে ছেড়ে তোমার লাল ঝরাপাতার গল্প করে সাপেদের সাথে। হাওয়ায় নৌকা দুলছে আর তার ক্ষতগুলি। দু'চার কণা বিষও হয়তো। আমি তো তাকেই জড়িয়ে ধরি। ভালোবাসি। সেখানেই থাকে অতীত আর ভবিষ্যতের হাউসকোট আর অল্প ভার্টিগো। সেখান থেকে উড়ে যাওয়া বালি কিংবা বুদবুদ দেখা যায় না। দু'টি সাপ আর তার বিষেরা চায় কেউ তাদের বাজিয়ে চলুক সারাজীবন।
যাওয়া আর আসার ভেতর কিছু কিছু খোলা জানলা থাকে। দিক ভুল করলে যে কোনওদিকে খুলে যেতে পারে প্রতিধ্বনি। দূরভাষ তুললে তারা গল্প করে ভাঙা মাঠের। তখন অন্ধেরা হিমবাহর মত মুখ করে ঘুরে বেড়ায়। স্মৃতি সততই ইসকুল হয়ে কিছু না কিছু শিখিয়ে চলছে প্রতিদিন। সেখানে শ্যাওলা আর থার্মোমিটারও থাকতে পারে। সবুজ রঙের জামা পরে আগুন উড়ে এলে, খুশি হয় সাইকেলরিক্সা। খুশি হয় কমলা খুঁজতে বেরনো প্রতারণার ড্রইংরুম, তবে তো পুতুলনাচ জমে ওঠে পৃথিবী জুড়ে। ট্রামরাস্তা ছেড়ে কুমারসম্ভব কলের গান শোনে মরুভূমির। শোনে নীল ওড়নার খোলামেলা বর্ণমালা। সেখানে অর্ধনারীশ্বর শূন্য থেকে বয়ে আনে আলোকবর্ষব্যাপী নিরাময়। কেন্দ্র নেই, পায়ের তলায় মাটি নেই- শুধু নিজের ভেতর তাকাতে শিখলে চলে যাওয়া যায় যে কোনো দিকে। এমনকি নিজের ছায়ার ভেতরও।
যাওয়া আর আসার ভেতর কিছু কিছু খোলা জানলা থাকে। দিক ভুল করলে যে কোনওদিকে খুলে যেতে পারে প্রতিধ্বনি। দূরভাষ তুললে তারা গল্প করে ভাঙা মাঠের। তখন অন্ধেরা হিমবাহর মত মুখ করে ঘুরে বেড়ায়। স্মৃতি সততই ইসকুল হয়ে কিছু না কিছু শিখিয়ে চলছে প্রতিদিন। সেখানে শ্যাওলা আর থার্মোমিটারও থাকতে পারে। সবুজ রঙের জামা পরে আগুন উড়ে এলে, খুশি হয় সাইকেলরিক্সা। খুশি হয় কমলা খুঁজতে বেরনো প্রতারণার ড্রইংরুম, তবে তো পুতুলনাচ জমে ওঠে পৃথিবী জুড়ে। ট্রামরাস্তা ছেড়ে কুমারসম্ভব কলের গান শোনে মরুভূমির। শোনে নীল ওড়নার খোলামেলা বর্ণমালা। সেখানে অর্ধনারীশ্বর শূন্য থেকে বয়ে আনে আলোকবর্ষব্যাপী নিরাময়। কেন্দ্র নেই, পায়ের তলায় মাটি নেই- শুধু নিজের ভেতর তাকাতে শিখলে চলে যাওয়া যায় যে কোনো দিকে। এমনকি নিজের ছায়ার ভেতরও।
গ্যাসবার্নারে সারারাত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দু'আঙুলে ধরে রাখি চৈত্রমাস। রঙিন কাচগুলি অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, তা থেকে কুড়িয়ে তুলি সবুজ আর ফ্লুরোসেন্ট মশারি। সেই মশারির পাশে চুপচাপ বসে থাকে চরাচর ছুঁয়ে থাকা একটি মাঠ। আর তার সবুজ কাচের গ্লাস। ওগো ফোলা মোমের মেয়ে মদের গ্লাসে নেমে তুমি নায়িকা হলে। ছাপাখানার টমটম নিয়ে বৃষ্টি চলেছে কবিতায়, তাকে তোমরা ভিজতে বলেছ বৃষ্টি নাকি মদের রঙে। এই সেই বাড়ি বুকের বোতাম খুলে শুয়ে আছে স্বপ্ন নিয়ে, সাবানের গন্ধ লাগা বুড়ো আকাশ নিয়ে। রুপোলি চুল আজও ময়ূর গাইতে পারে বলে, কালো তিল জামায় লাগিয়ে দেয় বোতাম। শিস দেওয়া পাখি ঠোঁটে করে রোদদুর নিয়ে এলে, আমি একটু রোদ নিয়ে লোফালুফি খেলি। মৃত্যুকে খেলাতে খেলাতে নিয়ে আসি খোলা টেবিলের উপর । সারাদিন সারারাত তার সামনে চুপচাপ বসে থাকে একজন খোলা মানুষ, আর তার ছায়া ও শূন্যগুলি।
রমিত দে-র প্রিয়/পছন্দের তিনটি কবিতা
বড় কষ্ট ।। আলোক সরকার
একটা বাড়ি
ছিল
তার
চারদিকেই দরজা ছিল
উত্তর দিকে
দরজা
পশ্চিম
দিকে দরজা
সবদিকের
দরজাই খোলা।
সেই বাড়িতে
রোদ্দুরের যাওয়া-আসার
কোনো
অসুবিধে ছিল না।
সে বাড়িতে
পাখিদের যাওয়া-আসার
কোনো
অসুবিধে ছিল না
একদিন
পাখিদের খেয়াল হল
এ আমরা
কোথায় আছি!
একদিন
রোদ্দুরের খেয়াল হল
এ আমরা
কোথায় আছি!
তারা
ভগবানের কাছে গিয়ে বলল
ভগবান
শোনো,শুনছ।
তুমি
আমাদের একটা বাড়ি দাও –
দরজা না
থাকলে
কি আর বাড়ি
হয়!
দরজা না
থাকলে
ছায়া হয় না
হাওয়া হয়
না
কোথাও
যাওয়া হয় না
কোথাও ফিরে
আসাও হয় না।
আমরা কোথাও
যাচ্ছি না।
আমরা কোথাও
ফিরছি না।
আমাদের বড়
কষ্ট।
অসমাপ্ত ।। স্বদেশ সেন
একটা লোকের
মাথায় ঝড় বলতে ঝোড়ো মাথা
আর একজন
তার এক মাথা বৃষ্টি
নাম ঝড়জল, নাম শাখাপ্রশাখা।
দু লোক তাবৎ দেশ ঘুরে বেড়ায়
দু লোক তাবৎ দেশ ঘুরে বেড়ায়
ইচ্ছার
কল্পনা আর কল্পনার দুঃখ নিয়ে
দেশের রোদে
হাঁটে
দেশের
ছায়াপাতায় যায়
যে চিনতে
চায়
তারই চেনা
হয়ে থাকে।
খিদে পেলে
যা পায় তাই
ঘুমে একপাশ
মনে রেখে আর একপাশে
হাঁপিয়ে
গেলে বড় বড় শ্বাস দিয়ে নামায়।
কত দিনের
তল্পিতল্পা শুধু ঘাড়ে
ঘাড় ছিলো
তাই।
একদিন ঝড়কে
বলি সেই মাথা কোথায়
বৃষ্টি
পড়াকে বলি কোথায় বৃষ্টি মাথার গাছ ?
আমার জন্য রাত দশটায় ।। সুশীল
ভৌমিক
আমার জন্যে
রাত দশটায় কোন ঘর খুলে যেতে পারে
আমি কিন্তু
আদৌ জানিনা আমার জন্যে কয়েক জোড়া জুতো
বাইরে
চন্দ্রালোক মেখে আছে কিনা
আমি কি
কয়েকটি হৃদপিন্ড বাইরে আঢাকা রেখে পাপ
কোরে
যাচ্ছি ক্রমাগত?
আমি কোন
বন্ধুর নাম ভুলে গেছি– কোন
অবশ্য
সাক্ষাৎ এড়িয়ে অব্যবহৃত জঙ্গলে আছি
আমার জন্যে
কেউ আজ ঘন ঘন মৃত মানুষের মতো
খারাপ সুইচে হাত
রেখে
আমার জন্যে রাত দশটায়
কোন ঘর খুলে যেতে পারে...
বিনির্মাণ
করলেন ধীমান চক্রবর্তী
বিনির্মান-১ ।। ধীমান চক্রবর্তী
একটা
বাড়ি যেন শুধু
দরজা দিয়েই তা তৈরি।
চারিদিকেই দরজা খোলা
কেউ দেখতে পেত, কেউ পেতনা।
দরজা দিয়েই তা তৈরি।
চারিদিকেই দরজা খোলা
কেউ দেখতে পেত, কেউ পেতনা।
রোদ্দুররা
উড়ে এলে, পাখিদেরও
নিয়ে আসত চোখের ভিতর।
রোশনাই, পালক আর ডাকনাম
খুঁজে পাওয়া যেত না।
কিংবা এক্কাদোক্বা খেলায় -
নিয়ে আসত চোখের ভিতর।
রোশনাই, পালক আর ডাকনাম
খুঁজে পাওয়া যেত না।
কিংবা এক্কাদোক্বা খেলায় -
রোদ্দুরেরও
নিজস্ব কিছু রোদ ছিল
কিংবা পাখিদের ভেতর
জেগে থাকা আরেকটা পাখি।
কিংবা পাখিদের ভেতর
জেগে থাকা আরেকটা পাখি।
একদিন
এসব কিছুই দেখতে না পাওয়ায়
তারা
খুঁজতে লাগলো নিজের বাড়ি।
নিজের ছায়া আর ছায়ার দরজা।
নিজের ছায়া আর ছায়ার দরজা।
নিজের বাড়ি নেই, নিজের দেশ
নেই
এসব না থাকলে-
যাওয়া আর ফেরা বলে কিছু থাকে না।
এসব না থাকলে-
যাওয়া আর ফেরা বলে কিছু থাকে না।
সূত্র: বড়
কষ্ট ।। আলোক সরকার
বিনির্মান-২ ।। ধীমান চক্রবর্তী
মাথার
ভেতর আর বাইরে হাওয়ার ছায়া
আর বৃষ্টির সাদা-কালো পতাকা উড়ছে
বৃষ্টি বাদল হাত পা ছড়ালে তার নাম দিই।
যেখানেই যায় তাদের স্বপ্নও যায় কত ধরাধরি
করে, সম্ভাবনার দুঃখত কিছুটা যায়।
রোদ বা গাছের ছায়া দিয়ে তৈরি গালিচা,
দেশ সেখানে বসলেই ঠিক চিনে নিতে পারো।
খিদে বা ঘুম যেরকমই হোক-
ঐ হেঁটে যাওয়া আর কমে না। ঝড়ো ঝড়ো
পড়ো পড়ো হলে, সে নেমে আসে সবুজে, -
আর বৃষ্টির সাদা-কালো পতাকা উড়ছে
বৃষ্টি বাদল হাত পা ছড়ালে তার নাম দিই।
যেখানেই যায় তাদের স্বপ্নও যায় কত ধরাধরি
করে, সম্ভাবনার দুঃখত কিছুটা যায়।
রোদ বা গাছের ছায়া দিয়ে তৈরি গালিচা,
দেশ সেখানে বসলেই ঠিক চিনে নিতে পারো।
খিদে বা ঘুম যেরকমই হোক-
ঐ হেঁটে যাওয়া আর কমে না। ঝড়ো ঝড়ো
পড়ো পড়ো হলে, সে নেমে আসে সবুজে, -
দিন
বা রাত কোনো এক সময়-
হাওয়া এবং বৃষ্টির কাছে
সুলুক সন্ধান করা
সেই - যে তাকে ধরে রেখেছে কিছুটা মায়া —
হাওয়া এবং বৃষ্টির কাছে
সুলুক সন্ধান করা
সেই - যে তাকে ধরে রেখেছে কিছুটা মায়া —
সূত্র: অসমাপ্ত ।। স্বদেশ সেন
বিনির্মান-৩ ।। ধীমান চক্রবর্তী
রাত
দশটা খুলে ফেলতে পারে যে কোনও ঘর
জানি বা না জানি দরজার বাইরে ঐ জুতো কি আমার জন্য
চাঁদের আলোয় হাবড়া লোকাল
কয়েকটি হৃদপিন্ড ভেতরে না বাইরে তাতে পাপের
বা আমার কি এসে যায়?
লাবন্যর নাম কি ভুলে যাওয়া যায় - জঙ্গলে এলে কোনো
দেখা হওয়াই আর জরুরী নয়
মৃত মানুষ আর খারাপ সুইচ পরস্পরের শরীর ছুঁয়ে বসে আছে
সারাদিন সারারাত
আমার জন্য যে কোনও ঘর খুলে ফেলতে পারে রাত দশটা...
জানি বা না জানি দরজার বাইরে ঐ জুতো কি আমার জন্য
চাঁদের আলোয় হাবড়া লোকাল
কয়েকটি হৃদপিন্ড ভেতরে না বাইরে তাতে পাপের
বা আমার কি এসে যায়?
লাবন্যর নাম কি ভুলে যাওয়া যায় - জঙ্গলে এলে কোনো
দেখা হওয়াই আর জরুরী নয়
মৃত মানুষ আর খারাপ সুইচ পরস্পরের শরীর ছুঁয়ে বসে আছে
সারাদিন সারারাত
আমার জন্য যে কোনও ঘর খুলে ফেলতে পারে রাত দশটা...
সূত্র: আমার জন্য রাত দশটায় ।। সুশীল ভৌমিক
দরজা, মাথা, রাত দশটা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কবি রমিত দে-র প্রিয় বা পছন্দের কবিতা তিনটি মার্ভেলাস। এঁরা কেউই
সেভাবে আলোচিত আলোকিত কবি নন। কিন্তু আবহমান বাংলা কবিতায় এঁরা সবাই স্বতন্ত্র
স্বর ও ভাবনার অধিকারী। বাংলা কবিতাকে এঁরা নানাভাবে বাঁক নেওয়াতে কাজ করে গেছেন।
কবি ধীমান চক্রবর্তী এঁদের তিনজনের তিনটি কবিতার বিনির্মাণ ঘটিয়েছেন। কবি ধীমান
চক্রবর্তী বাংলা কবিতার মেন-স্ট্রিমে বিলং করেন না। আটের দশক থেকেই তাঁর অভিযান
নতুনের পথে। প্রচলিত ধারাটির আমূল বদলই তাঁর লক্ষ্য এবং সে-কাজে সফলতার সঙ্গে
অগ্রসরমান। তিনি এই কবিতা তিনটির প্রায় মূলানুগ বিনির্মাণ করেছেন। এটা কতটা সমীচীন
তা আমি পাঠকের হাতেই ছেড়ে রাখি। আমরা বরং খেয়াল করি বিনির্মিত কবিতাগুলোর ভাব
ভাবনা আর ভাষা। প্রথমেই যেটা উল্লেখ্য, তিনজন কবির ভাবনার কেন্দ্রক ও বিস্তৃতি
যেমন আলাদা তেমনি তাঁদের কাব্যভাষাও আলাদা। কিন্তু কবি ধীমান চক্রবর্তী
ভাবনামণ্ডলীর অনুসারি হয়েও নিজের ভাষাটি অক্ষুন্ন রেখেছেন। অর্থাৎ বিনির্মিত
কবিতাগুলোর ভাষাবয়ন এক। সেখানে কবিকে আলাদা করে চেনা যায় তাঁর ভাষার জন্য।
যেমন, কবি আলোক সরকারের কবিতাটি শুরু হচ্ছে—
কবি ধীমান চক্রবর্তী তাঁর কবিতাটি শুরু করছেন এভাবে—
‘একটা বাড়ি যেন শুধু
দরজা দিয়েই তা তৈরি।
চারিদিকেই দরজা খোলা
কেউ দেখতে পেত, কেউ পেতনা।’
দেখা যাচ্ছে ভাবনার অনুষঙ্গটি এক, দরজা। এমনকি ভাবনার বিস্তৃতিতে সামান্যই তফাৎ। প্রথম কবিতায় সব দিকেই দরজা আছে এবং তা খোলা, এটা নিশ্চিত। আর দ্বিতীয় কবিতায় বাড়িটা দরজা দিয়েই তৈরি, চারদিক খোলা, কিন্তু কেউ দেখতে পেত কেউ পেত না। এটা অনিশ্চিত। এখানে একটা বড় তফাৎ। কবিতাদুটির শেষে গিয়েও আমরা দেখি দুজনের ভাবনা সমান্তরালে হাঁটছে। ধীমানের ভাষা যে আলাদা তা কবিতার মধ্যাংশটি পড়লেই বোঝা যায়।
‘একটা বাড়ি ছিল
তার
চারদিকেই দরজা ছিল
উত্তর দিকে দরজা
পশ্চিম দিকে দরজা
সবদিকের দরজাই খোলা।’
কবি ধীমান চক্রবর্তী তাঁর কবিতাটি শুরু করছেন এভাবে—
‘একটা বাড়ি যেন শুধু
দরজা দিয়েই তা তৈরি।
চারিদিকেই দরজা খোলা
কেউ দেখতে পেত, কেউ পেতনা।’
দেখা যাচ্ছে ভাবনার অনুষঙ্গটি এক, দরজা। এমনকি ভাবনার বিস্তৃতিতে সামান্যই তফাৎ। প্রথম কবিতায় সব দিকেই দরজা আছে এবং তা খোলা, এটা নিশ্চিত। আর দ্বিতীয় কবিতায় বাড়িটা দরজা দিয়েই তৈরি, চারদিক খোলা, কিন্তু কেউ দেখতে পেত কেউ পেত না। এটা অনিশ্চিত। এখানে একটা বড় তফাৎ। কবিতাদুটির শেষে গিয়েও আমরা দেখি দুজনের ভাবনা সমান্তরালে হাঁটছে। ধীমানের ভাষা যে আলাদা তা কবিতার মধ্যাংশটি পড়লেই বোঝা যায়।
দ্বিতীয় কবিতার ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্য করি কবি স্বদেশ সেনের কবিতায়
যে শব্দসমূহ, যেমন, ‘মাথা’, ‘ঝড়’, ‘বৃষ্টি’, ‘ঝড়জল’, ‘রৌদ্র’, ‘ছায়াপাতা’,
‘হাঁটা’, ‘খিদে’, ‘ঘুম’ ইত্যাদি, তা কবি ধীমান চক্রবর্তীর কবিতাতেও সামান্য
পরিবর্তন সহ বর্তমান, যেমন, ‘মাথা’, ‘বৃষ্টি’, ‘বৃষ্টি বাদল’, ‘গাছের ছায়া’,
‘খিদে’, ‘ঘুম’, ‘হাঁটা’ ইত্যাদি। শুধু শব্দ নয় ভাবনাকেও সেভাবে বদলাননি ধীমান
চক্রবর্তী। প্রকাশভঙ্গি ও ভাষায় এনেছেন তারতম্য। দেখে নেওয়া যাক একটু-
“রোদ বা গাছের ছায়া দিয়ে তৈরি গালিচা,
দেশ সেখানে বসলেই ঠিক চিনে নিতে পারো। খিদে বা ঘুম যেরকমই হোক-
ঐ হেঁটে যাওয়া আর কমে না। ঝড়ো ঝড়ো
পড়ো পড়ো হলে, সে নেমে আসে সবুজে, -”
দেশ সেখানে বসলেই ঠিক চিনে নিতে পারো। খিদে বা ঘুম যেরকমই হোক-
ঐ হেঁটে যাওয়া আর কমে না। ঝড়ো ঝড়ো
পড়ো পড়ো হলে, সে নেমে আসে সবুজে, -”
এখানে ধীমান চক্রবর্তীর সিগনেচার আমরা খুঁজে পাই।
কবি সুশীল ভৌমিকের তৃতীয় কবিতাটি একটি সম্ভাবনার কবিতা। রাত দশটায় তাঁর জন্য কী হতে পারে বা পারে না ইত্যাদির সম্ভাবনা। জুতো বাইরে চন্দ্রালোক মেখে আছে কিনা নিশ্চিত নয়, নিজে ক্রমাগত পাপ করে যাচ্ছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সংশয়, বন্ধুর নাম ভুলে গেছেন, দ্বিধা, তাঁর জন্য রাত দশটায় কোনো ঘর খুলে যেতে পারে, পারে, অর্থাৎ সম্ভাবনা। উপজীব্য রাত দশটা। উপজীব্য কবির সংশয় দ্বিধা সম্ভাবনা। এতেই নির্মিত কবিতাটি। ধীমান চক্রবর্তীর বিনির্মিত কবিতাটিরও উপজীব্য রাত দশটা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সংশয় যদিও খুব জোরালো নয়, আর সম্ভাবনা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কবিতার ভাবনার বিস্তৃতি ও অনুষঙ্গ বিনির্মিত কবিতাতেও প্রায় একইভাবে প্রতিভাত। এক পঙক্তির একটিই উদাহরণ, সুশীল ভৌমিকের শেষ পঙক্তি—
‘আমার জন্যে রাত দশটায় কোন ঘর খুলে যেতে পারে’।
ধীমানের শেষ পঙক্তি—
‘আমার জন্য যে কোনও ঘর খুলে ফেলতে পারে রাত দশটা....’।
যেটুকু তফাৎ তা ভাষায়।
এভাবেই অত্যন্ত মূলানুগ বিনির্মাণ করেছেন কবি ধীমান চক্রবর্তী। যদিও
আমরা মার্ভেলাস কবিতা তিনটির বিনিময়ে আরও তিনটি মার্ভেলাস কবিতাই পেয়ে গেলাম।